বেদ বাণী
গায়ত্রী মন্ত্র —
সামবেদ উত্তরার্চ্চিক. ৬/৩/১০।
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরুপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগতসৃষ্টিকারী ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি।
❏ সর্ব্বত্র —
তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দুরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বসাস্য বাহাতঃ।।
➢ যজুর্বেদ. ৪০/৫।
বঙ্গানুবাদঃ- সেই পরমাত্মা পাপীর দৃষ্টি হইতে চলমান হন, কিন্তু স্বীয় স্বরুপ হইতে চলমান হন না। তিনি অধার্মিকের দৃষ্টি হইতে বহু দূরে এবং তিনিই ধার্মিকের দৃষ্টিতে অতি নিকটে। তিনি এই সব জীব ও জগতের মধ্যে এবং প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ জগতের বাহিরে বর্তমান রহিয়াছেন।
❏ নিরাকার —
স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম স্নাবিরং
শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধম্ কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোহর্থাম্ব্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।
➢ যজুর্বেদ. ৪০/৮৷
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা সর্বব্যাপক,
সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্র
রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত,
রোগরোহিত, জম্মরহিত,শুদ্ধ,
নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী,
দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি
তাহার শ্বাশত প্রজা জীবের জন্য
যথাযথ ফলের বিধান করেন।
❏ ঈশ্বর এক —
ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ১৩/৪/২
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন। এক ঈশ্বর চিন্তন জ্ঞানীর, বহু ঈশ্বরের ধারণা মুর্খের।
❏ বহু নাম —
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু,
রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ১/১৬৪/৪৬।
বঙ্গানুবাদঃ- এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।
❏ সৎ —
বেনস্তৎপশ্যন্নিহিতং গুহা সদ্যত্র
বিশ্বং ভবত্যে কনীডম্। তস্মিন্নিদং
সঞ্চ বিচৈতি সর্ব্বং স ওতঃ প্রোতশ্ব
বিভুঃ প্রজাসু।।
➢ যজুর্বেদ. ৩২/৮।
বঙ্গানুবাদঃ- যাহাতে সর্বজগৎ আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে সেই বুদ্ধিগম্য চেতন ব্রহ্মকে মেধাবী পুরুষ জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন। সর্ব্ব জগৎ প্রলয়কালে তাঁহাতে সূক্ষ্মরূপে মিলিত হয় এবং উৎপত্তিকালে পৃথক স্থুলরুপে পরিণত হয়। সেই সত্যস্বরুপ পরমাত্মা জীব ও প্রকৃতিতে ওতঃপ্রোতঃ ভাবে ব্যপক রহিয়াছেন।
❏ সর্ব্ব প্রবিষ্ট —
যো অগ্নৌ রুদ্রো যো অপস্বন্তর্য ওষধী বীরুধ
আবিবেশ। য ইমা বিশ্বা ভুবনানি চাকলৃপে
তস্মৈ রুদ্রায় নমো অস্ত্বগ্নয়ে।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৭/৮৭/১।
বঙ্গানুবাদঃ- যে পরমাত্মা অগ্নিতে, জলে, ওষধীতে ও বনস্পতিতে ব্যাপক রহিয়াছেন, যিনি এই নিখিল
ভুবনকে রচনা করিয়াছেন সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মাকে নমষ্কার।
❏ পূর্ণ —
সহস্র শীর্যা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
স ভূমিং সর্ব্বতঃ স্পৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্।
➢ যজুর্বেদ. ৩১/১।
বঙ্গানুবাদঃ- যাঁহার মস্তক অসংখ্য, নেত্র অসংখ্য, পদ অসংখ্য, সর্ব্বত্র পরিপূর্ণ তিনিই পরমাত্মা। তিনিই বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপক হইয়া পঞ্চ স্থুলভূত ও পঞ্চ সূক্ষ্মভূতে গঠিত জগৎকে অতিক্রম করিয়া অবস্থান করিতেছেন।
❏ প্রতিমা নাই —
ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরণ্য গর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেযা যস্মান্ন জাতঃ ইত্যেষঃ।।
➢ যজুর্বেদ. ৩২/৩
বঙ্গানুবাদঃ- মহতী কীর্তিতেই যাঁহার নামের স্মরণ হয়, যাঁহার গর্ভে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী স্থান পাইয়াছে বলিয়া প্রত্যক্ষ, আমাকে তোমা হইতে বিমুখ করিও না- এইরুপ ভাবে যাঁহার প্রার্থনা করিতে হয় এবং জন্মগ্রহণাদি করেন নাই এজন্য যাঁহার উপাসনা বিধেয় সেই পরমাত্মার কোন প্রতিকৃতি বা মূর্তি নাই। ঈশ্বরের কোন পরিমাপ হয় না।
❏ সর্ব্বত্র-স্থিত —
পরীত্য ভূতানি পরীত্য লোকান্ পরীত্য
সর্ব্বা প্রদিশো দিশশ্চ। উপস্থায় প্রথমজামৃত
স্যাত্মনাত্মনমভি সংবিবেশ।।
➢ যজুর্বেদ. ৩২/১১।
বঙ্গানুবাদঃ- যিনি প্রাণীদিগকে, লোক লোকান্তরকে সবদিকে ব্যাপ্ত করিয়া পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ চারি দিককে, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত চারি উপদিককে এবং উপর নীচে সব দিক ব্যাপ্ত করিয়া সত্যের স্বরুপে প্রবিষ্ট রহিয়াছেন বেদবাণী হৃদয়ঙ্গম করিয়া শুদ্ধ অন্তঃকরণ দ্বারা তাঁহাকে প্রাপ্ত হও।
❏ শত্রু রহিত —
অভ্রাতৃব্যো অনা ত্বমনাপিরিন্দ্র জনুষা সনাদসি। যুধেদাপিত্বমিচ্ছসে।।
➢ ঋগ্বেদ. ৮/২১/১৩।
বঙ্গানুবাদঃ- হে পরমাত্মান! তুমি সর্বদাই শত্রু রহিত, অজাতশত্রু নেতৃহীন বিনায়ক, বন্ধুবান্ধবহীন, অদ্বিতীয় পুরাণ পুরুষ। তবুও তুমি সম্বন্ধ সূত্রে জীবের বন্ধুত্ব চাহিয়া থাক।
❏ দ্বৈতবাদ —
ন তং বিদাথ য ইমা জজানান্যদ্যুষ্মাকমন্তরং বভুব। নীহারেণ প্রাবৃতা জল্প্যা চাসুতৃপ উক্থশাসশ্চরন্তি।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/৮২/৬। ➢ যজুর্বেদ. ১৭/৩১।
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! সেই পরমাত্মাকে বুঝিতেছ না। তিনি এই জগৎ রচনা করিয়াছেন। তিনি তোমাদের মধ্যে বিরাজমান অথচ তিনি তোমা হইতে পৃথক। বিষয়াসক্ত পুরুষেরা অবিদ্যার কুয়াসা ও শুষ্কতর্কে আবৃত থাকিয়া সাংসারিক বিষয়কেই তৃপ্তির লক্ষ্য মনে করে এবং এরুপ বহু স্ত্রোত্র পাঠি ভক্তও ইতস্ততঃ ভ্রমন করে।
❏ এক ঈশ্বরের স্তব —
মা চিদন্যদ্ধি শংসত সখ্যায়ো মা রিষণ্যত।
ইন্দ্রমিতস্তোতা বৃষেণ সচা সুতে মুহুরুকথা চ
সংশত।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ২০/৮৫/১।
বঙ্গানুবাদঃ- হে মিত্র! ঈশ্বর ভিন্ন অন্য কাহারো
স্তবন করো না এবং দুঃখী হয়ো না। এই উৎপন্ন জগতের সাথে মিলে সেই শক্তিশালী শত্রুর নাশকারী
প্রভূর স্তুতি করো এবং বারংবার উক্ত
ন্তোত্রের স্তবন করো।
❏ অদ্বিতীয় —
য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ পতি র্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৬/৪৫/১৬।
বঙ্গানুবাদঃ- যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর।
❏ অক্ষয়বেদ —
অংতি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।
দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ১০/৮/৩২।
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্য সমীপবর্ত্তী পরমাত্মাকে দেখেও না, তাঁহাকে ছাড়িতেও পারে না। পরমাত্মার কাব্য বেদকে দেখ; তাহা মরেও না, জীর্ণও হয় না।
❏ কর্ম এক হোক —
সংগচ্ছধবং সংবদদ্ধং সংবো মানাংসি জানতাম্।
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/২|
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! তোমরা একসঙ্গে চল, একসঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কার যুক্ত হউক। পূর্ব্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পাদন করিয়াছেন তোমরাও সেইরূপ কর।।
❏ চিত্ত এক হোক—
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানসংখ্যক মন সহচিত্তমেষাম্।
সমানসংখ্যক মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।।
➢ ঋগ্বেদ.১০/১৯১/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের মত এক হউক, মিলন ভূমি এক হউক, মন এক হউক, সকলের চিত্ত সম্মিলিত হউক, তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্ত করিয়াছি, তোমাদের সকলের জন্য অন্ন ও উপভোগ একই প্রকারে দিয়াছি।।
❏ লক্ষ্য এক হোক —
সমানী ব আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তুু বো মনো যথা বঃ সু সহাসতি।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হউক, তোমাদের হৃদয় সমান হউক, তোমাদের মন সমান হউক। এইভাবে তোমরা সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হউক।
❏ মিত্র দৃষ্টি —
দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষন্তাম্।
মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।
মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে।।
➢ যজুর্বেদ. ৬৬/১৮ |
বঙ্গানুবাদঃ- হে দুঃখনাশক পরমেত্মন্ ! আমাকে সুখের সহিত বর্দ্ধন কর। সব প্রাণী আমাকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখুক। আমি সর্ব্ব প্রাণীকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি। আমরা একে অন্যকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি।
❏ মিলন —
সংবঃ পৃচ্যন্তাং তম্বঃ সংমনাংসি সমুব্রতা।
সং বোহয়ং ব্রহ্মণস্পতির্ভগঃ সংবো অজিগমৎ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের শরীর মন এবং কর্ম্ম একসঙ্গে মিলিয়া থাকুক। হে জ্ঞানের রক্ষক। ঐশ্বর্যময় প্রভো! সকলকে মিলাইয়া রাখ।
❏ সন্তোষ —
সংজ্ঞপনং বো মনসোহথ সংজ্ঞপনং হৃদঃ।
অথচো ভগস্য যচ্ছান্তং তেন সংজ্ঞপয়ামি বঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/২|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের মনের উত্তম জ্ঞান, হৃদয়ের সন্তোষ ভাব এবং ভাগ্যের শ্রান্তি এই সব দ্বারা তোমাদের সন্তোষ বিধান করিতেছি।
❏ ব্রাহ্মণ -ক্ষত্রিয় —
যত্র ব্রহ্মচ ক্ষত্রংচ সম্যঞ্চৌ চরতঃ সহ।
তংলোকং পূণ্যং প্রজ্ঞেয়ং যত্রদেবাঃ সহাগ্নিনা।।
➢ যজুর্বেদ. ২০/২৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- যেখানে জ্ঞানীরা এবং বীর পুরুষেরা একসঙ্গে বাস করেন, যেখানে বিদ্বানেরা তেজের সঙ্গে থাকেন সেই দেশকে পূণ্য ও জ্ঞানময় জানিবে।
❏ সকলে ভাই ভাই —
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাসঃ এতে সং ভ্রাতরো তাবৃধুঃ সৌভগায়।
যুব পিতা স্বপা রুদ্র এসাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৬০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় বা কেহ ছোট নয়। ইহারা ভাই ভাই। সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে। ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্ম্ম ঈশ্বর এবং মাতা দুগ্ধবতী প্রকৃতি। প্রকৃতি মাতা ক্রন্দনহীন পুরুষার্থী সন্তানকেই সুদিন প্রদান করে।
❏ জন্মভূমি —
তে অজ্যেষ্ঠা অকনিষ্ঠাস উদ্ভিদো হমধ্যমাসেঃ মহসা বি বাবৃধুঃ।
সুজাতাসো জনুষঃ পৃশ্নি মাতরা দিবো মর্যা আ নো অচ্ছা জিগতন।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৫৯/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয় এবং কেহ মধ্যম নয় তাঁহারা সকলেই উন্নতি লাভ করিতেছে। উৎসাহের সঙ্গে বিশেষ ভাবে ক্রমোন্নতির প্রযত্ন করিতেছে। জন্ম হইতেই তাঁহারা কুলীন। তাঁহারা জন্মভূমির সন্তান দিব্য মনুষ্য। তাঁহারা আমার নিকট সত্য পথে আগমন করুক।
❏ অস্পৃশ্যতা বর্জন —
সহৃদ্বয়ং সাংমনস্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ।
অন্যো অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- আমি তোমাদের জন্য সহৃদয়তা, উত্তম মন, নির্বৈরতা প্রদান করিয়াছি। তোমরা একে অন্যের প্রতি গাভী যেমন নবজাত বৎসের মলিন শরীরকে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করে সেইরূপ প্রেম কর।
❏ পিতা -পুত্র —
অনুব্রত পিতুঃ পুত্রশোক মাত্রা ভবতু সংমনাঃ।
জায়াপত্যে মধমতীং বাচং বদতু শংতিবাম্।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/২|
বঙ্গানুবাদঃ- পুত্র পিতার অনুকুলে কার্য করিবে, মাতার সহিত সৎ ভাবে থাকিবে। পত্নী পতির সহিত শান্ত ও মধুর বচন বলিবে।
❏ ভ্রাতা ভাগ্নী —
মা ভ্রাতা ভ্রাতারং দ্বিক্ষম্মা স্বসারমুতস্বসা।
সম্যঞ্চঃ সব্রতা ভূত্বা বাচং বদত ভদ্রয়া।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- ভ্রাতা ভ্রাতাকে দ্বেষ করিবে না। ভাগ্নী ভগ্নীকে দ্বেষ করিবে না। তোমরা সকলে সম মতাবলম্বী ও সম কর্ম্মাবলম্বী হইয়া সৎ ভাবে বার্ত্তালাপ কর।
❏ অবিরোধ —
যেন দেবা ন বিযংতি নোচ বিদ্বিষতে মিথঃ।
তৎকৃন্মো ব্রহ্ম বো গৃহে সংজ্ঞানাং পুরুষেভ্যঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- যাহাতে জ্ঞানীদের মধ্যে বিরোধ না হয়, পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ না জন্মে সেই উত্তম জ্ঞান তোমাদের গৃহে মনুষ্যের মধ্যে দান করিয়াছি।
❏ সম্বন্ধ —
জ্যায়স্বন্তশ্চিত্তিনো মা বি যৌষ্ট সংরাধয়ন্ত সধুরাশ্চরন্ত।
অন্যো অন্যস্মৈ বল্পুবদন্ত এত সব্রীচী সাম্বঃ সংমনসস্কৃণোমি।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমরা জ্যেষ্ঠর সন্মান করিও। তোমরা বিচারশীল সাধক্ একই বন্ধনের নীচে আবদ্ধ হইয়া চলিতেছ। তোমরা পৃথক হইও না। একে অন্যের সঙ্গে মনোহর কথাবার্ত্তায় অগ্রসর হও।
❏ পানাহার —
সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজোমি।
সমঞ্চোহগ্নিং য়পর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের পান এক সঙ্গে, ভোজনও এক সঙ্গে হউক। তোমাদিগকে এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করিয়াছি। সকলে মিলিয়া পরমাত্মাকে পূজা কর। রথচক্রের কেন্দ্রের চারিদিকে যেমন অর থাকে তোমরা সেই ভাবে থাক।
❏ অতি ভোজন —
সঘ্রীচীনাম্বঃ সংমনসস্কৃণোম্যে
কশষ্টীস্তুসংবননেন সর্বান্।
দেবা ইবাহ মৃতং রক্ষমাণাঃ সায়ংপ্রাতঃ সৌমনসো বো অস্ত।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৭|
বঙ্গানুবাদঃ তোমরা সৎভাবে একই পথে অগ্রসর হও, চিত্ত তোমাদের উন্নত হউক, পানাহার তোমাদের এক সঙ্গে হউক -আমি তোমাদের জন্য এইরূপ ব্যবস্থাই করিয়াছি। অমৃত রসে আপ্লুত বিদ্বানদের ন্যায় প্রাতে ও সায়ংকালে তোমাদের চিত্ত প্রসন্ন হউক।
● ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।।
ওঁ ভূ র্ভুবঃ স্বঃতত্ সবিতুর্বরেণ্যংভর্গো দেবস্য ধীমহি।ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৩/৬২/১০, যজুর্বেদ. ৩/৩৫,৩০/২,সামবেদ উত্তরার্চ্চিক. ৬/৩/১০।
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরুপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগতসৃষ্টিকারী ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি।
❏ সর্ব্বত্র —
তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দুরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বসাস্য বাহাতঃ।।
➢ যজুর্বেদ. ৪০/৫।
বঙ্গানুবাদঃ- সেই পরমাত্মা পাপীর দৃষ্টি হইতে চলমান হন, কিন্তু স্বীয় স্বরুপ হইতে চলমান হন না। তিনি অধার্মিকের দৃষ্টি হইতে বহু দূরে এবং তিনিই ধার্মিকের দৃষ্টিতে অতি নিকটে। তিনি এই সব জীব ও জগতের মধ্যে এবং প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ জগতের বাহিরে বর্তমান রহিয়াছেন।
❏ নিরাকার —
স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম স্নাবিরং
শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধম্ কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোহর্থাম্ব্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।
➢ যজুর্বেদ. ৪০/৮৷
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা সর্বব্যাপক,
সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্র
রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত,
রোগরোহিত, জম্মরহিত,শুদ্ধ,
নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী,
দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি
তাহার শ্বাশত প্রজা জীবের জন্য
যথাযথ ফলের বিধান করেন।
❏ ঈশ্বর এক —
ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ১৩/৪/২
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন। এক ঈশ্বর চিন্তন জ্ঞানীর, বহু ঈশ্বরের ধারণা মুর্খের।
❏ বহু নাম —
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু,
রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ১/১৬৪/৪৬।
বঙ্গানুবাদঃ- এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।
❏ সৎ —
বেনস্তৎপশ্যন্নিহিতং গুহা সদ্যত্র
বিশ্বং ভবত্যে কনীডম্। তস্মিন্নিদং
সঞ্চ বিচৈতি সর্ব্বং স ওতঃ প্রোতশ্ব
বিভুঃ প্রজাসু।।
➢ যজুর্বেদ. ৩২/৮।
বঙ্গানুবাদঃ- যাহাতে সর্বজগৎ আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে সেই বুদ্ধিগম্য চেতন ব্রহ্মকে মেধাবী পুরুষ জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন। সর্ব্ব জগৎ প্রলয়কালে তাঁহাতে সূক্ষ্মরূপে মিলিত হয় এবং উৎপত্তিকালে পৃথক স্থুলরুপে পরিণত হয়। সেই সত্যস্বরুপ পরমাত্মা জীব ও প্রকৃতিতে ওতঃপ্রোতঃ ভাবে ব্যপক রহিয়াছেন।
❏ সর্ব্ব প্রবিষ্ট —
যো অগ্নৌ রুদ্রো যো অপস্বন্তর্য ওষধী বীরুধ
আবিবেশ। য ইমা বিশ্বা ভুবনানি চাকলৃপে
তস্মৈ রুদ্রায় নমো অস্ত্বগ্নয়ে।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৭/৮৭/১।
বঙ্গানুবাদঃ- যে পরমাত্মা অগ্নিতে, জলে, ওষধীতে ও বনস্পতিতে ব্যাপক রহিয়াছেন, যিনি এই নিখিল
ভুবনকে রচনা করিয়াছেন সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মাকে নমষ্কার।
❏ পূর্ণ —
সহস্র শীর্যা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
স ভূমিং সর্ব্বতঃ স্পৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্।
➢ যজুর্বেদ. ৩১/১।
বঙ্গানুবাদঃ- যাঁহার মস্তক অসংখ্য, নেত্র অসংখ্য, পদ অসংখ্য, সর্ব্বত্র পরিপূর্ণ তিনিই পরমাত্মা। তিনিই বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপক হইয়া পঞ্চ স্থুলভূত ও পঞ্চ সূক্ষ্মভূতে গঠিত জগৎকে অতিক্রম করিয়া অবস্থান করিতেছেন।
❏ প্রতিমা নাই —
ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরণ্য গর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেযা যস্মান্ন জাতঃ ইত্যেষঃ।।
➢ যজুর্বেদ. ৩২/৩
বঙ্গানুবাদঃ- মহতী কীর্তিতেই যাঁহার নামের স্মরণ হয়, যাঁহার গর্ভে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী স্থান পাইয়াছে বলিয়া প্রত্যক্ষ, আমাকে তোমা হইতে বিমুখ করিও না- এইরুপ ভাবে যাঁহার প্রার্থনা করিতে হয় এবং জন্মগ্রহণাদি করেন নাই এজন্য যাঁহার উপাসনা বিধেয় সেই পরমাত্মার কোন প্রতিকৃতি বা মূর্তি নাই। ঈশ্বরের কোন পরিমাপ হয় না।
❏ সর্ব্বত্র-স্থিত —
পরীত্য ভূতানি পরীত্য লোকান্ পরীত্য
সর্ব্বা প্রদিশো দিশশ্চ। উপস্থায় প্রথমজামৃত
স্যাত্মনাত্মনমভি সংবিবেশ।।
➢ যজুর্বেদ. ৩২/১১।
বঙ্গানুবাদঃ- যিনি প্রাণীদিগকে, লোক লোকান্তরকে সবদিকে ব্যাপ্ত করিয়া পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ চারি দিককে, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত চারি উপদিককে এবং উপর নীচে সব দিক ব্যাপ্ত করিয়া সত্যের স্বরুপে প্রবিষ্ট রহিয়াছেন বেদবাণী হৃদয়ঙ্গম করিয়া শুদ্ধ অন্তঃকরণ দ্বারা তাঁহাকে প্রাপ্ত হও।
❏ শত্রু রহিত —
অভ্রাতৃব্যো অনা ত্বমনাপিরিন্দ্র জনুষা সনাদসি। যুধেদাপিত্বমিচ্ছসে।।
➢ ঋগ্বেদ. ৮/২১/১৩।
বঙ্গানুবাদঃ- হে পরমাত্মান! তুমি সর্বদাই শত্রু রহিত, অজাতশত্রু নেতৃহীন বিনায়ক, বন্ধুবান্ধবহীন, অদ্বিতীয় পুরাণ পুরুষ। তবুও তুমি সম্বন্ধ সূত্রে জীবের বন্ধুত্ব চাহিয়া থাক।
❏ দ্বৈতবাদ —
ন তং বিদাথ য ইমা জজানান্যদ্যুষ্মাকমন্তরং বভুব। নীহারেণ প্রাবৃতা জল্প্যা চাসুতৃপ উক্থশাসশ্চরন্তি।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/৮২/৬। ➢ যজুর্বেদ. ১৭/৩১।
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! সেই পরমাত্মাকে বুঝিতেছ না। তিনি এই জগৎ রচনা করিয়াছেন। তিনি তোমাদের মধ্যে বিরাজমান অথচ তিনি তোমা হইতে পৃথক। বিষয়াসক্ত পুরুষেরা অবিদ্যার কুয়াসা ও শুষ্কতর্কে আবৃত থাকিয়া সাংসারিক বিষয়কেই তৃপ্তির লক্ষ্য মনে করে এবং এরুপ বহু স্ত্রোত্র পাঠি ভক্তও ইতস্ততঃ ভ্রমন করে।
❏ এক ঈশ্বরের স্তব —
মা চিদন্যদ্ধি শংসত সখ্যায়ো মা রিষণ্যত।
ইন্দ্রমিতস্তোতা বৃষেণ সচা সুতে মুহুরুকথা চ
সংশত।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ২০/৮৫/১।
বঙ্গানুবাদঃ- হে মিত্র! ঈশ্বর ভিন্ন অন্য কাহারো
স্তবন করো না এবং দুঃখী হয়ো না। এই উৎপন্ন জগতের সাথে মিলে সেই শক্তিশালী শত্রুর নাশকারী
প্রভূর স্তুতি করো এবং বারংবার উক্ত
ন্তোত্রের স্তবন করো।
❏ অদ্বিতীয় —
য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ পতি র্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৬/৪৫/১৬।
বঙ্গানুবাদঃ- যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর।
❏ অক্ষয়বেদ —
অংতি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।
দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ১০/৮/৩২।
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্য সমীপবর্ত্তী পরমাত্মাকে দেখেও না, তাঁহাকে ছাড়িতেও পারে না। পরমাত্মার কাব্য বেদকে দেখ; তাহা মরেও না, জীর্ণও হয় না।
❏ কর্ম এক হোক —
সংগচ্ছধবং সংবদদ্ধং সংবো মানাংসি জানতাম্।
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/২|
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! তোমরা একসঙ্গে চল, একসঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কার যুক্ত হউক। পূর্ব্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পাদন করিয়াছেন তোমরাও সেইরূপ কর।।
❏ চিত্ত এক হোক—
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানসংখ্যক মন সহচিত্তমেষাম্।
সমানসংখ্যক মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।।
➢ ঋগ্বেদ.১০/১৯১/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের মত এক হউক, মিলন ভূমি এক হউক, মন এক হউক, সকলের চিত্ত সম্মিলিত হউক, তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্ত করিয়াছি, তোমাদের সকলের জন্য অন্ন ও উপভোগ একই প্রকারে দিয়াছি।।
❏ লক্ষ্য এক হোক —
সমানী ব আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তুু বো মনো যথা বঃ সু সহাসতি।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হউক, তোমাদের হৃদয় সমান হউক, তোমাদের মন সমান হউক। এইভাবে তোমরা সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হউক।
❏ মিত্র দৃষ্টি —
দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষন্তাম্।
মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।
মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে।।
➢ যজুর্বেদ. ৬৬/১৮ |
বঙ্গানুবাদঃ- হে দুঃখনাশক পরমেত্মন্ ! আমাকে সুখের সহিত বর্দ্ধন কর। সব প্রাণী আমাকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখুক। আমি সর্ব্ব প্রাণীকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি। আমরা একে অন্যকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি।
❏ মিলন —
সংবঃ পৃচ্যন্তাং তম্বঃ সংমনাংসি সমুব্রতা।
সং বোহয়ং ব্রহ্মণস্পতির্ভগঃ সংবো অজিগমৎ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের শরীর মন এবং কর্ম্ম একসঙ্গে মিলিয়া থাকুক। হে জ্ঞানের রক্ষক। ঐশ্বর্যময় প্রভো! সকলকে মিলাইয়া রাখ।
❏ সন্তোষ —
সংজ্ঞপনং বো মনসোহথ সংজ্ঞপনং হৃদঃ।
অথচো ভগস্য যচ্ছান্তং তেন সংজ্ঞপয়ামি বঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/২|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের মনের উত্তম জ্ঞান, হৃদয়ের সন্তোষ ভাব এবং ভাগ্যের শ্রান্তি এই সব দ্বারা তোমাদের সন্তোষ বিধান করিতেছি।
❏ ব্রাহ্মণ -ক্ষত্রিয় —
যত্র ব্রহ্মচ ক্ষত্রংচ সম্যঞ্চৌ চরতঃ সহ।
তংলোকং পূণ্যং প্রজ্ঞেয়ং যত্রদেবাঃ সহাগ্নিনা।।
➢ যজুর্বেদ. ২০/২৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- যেখানে জ্ঞানীরা এবং বীর পুরুষেরা একসঙ্গে বাস করেন, যেখানে বিদ্বানেরা তেজের সঙ্গে থাকেন সেই দেশকে পূণ্য ও জ্ঞানময় জানিবে।
❏ সকলে ভাই ভাই —
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাসঃ এতে সং ভ্রাতরো তাবৃধুঃ সৌভগায়।
যুব পিতা স্বপা রুদ্র এসাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৬০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় বা কেহ ছোট নয়। ইহারা ভাই ভাই। সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে। ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্ম্ম ঈশ্বর এবং মাতা দুগ্ধবতী প্রকৃতি। প্রকৃতি মাতা ক্রন্দনহীন পুরুষার্থী সন্তানকেই সুদিন প্রদান করে।
❏ জন্মভূমি —
তে অজ্যেষ্ঠা অকনিষ্ঠাস উদ্ভিদো হমধ্যমাসেঃ মহসা বি বাবৃধুঃ।
সুজাতাসো জনুষঃ পৃশ্নি মাতরা দিবো মর্যা আ নো অচ্ছা জিগতন।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৫৯/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয় এবং কেহ মধ্যম নয় তাঁহারা সকলেই উন্নতি লাভ করিতেছে। উৎসাহের সঙ্গে বিশেষ ভাবে ক্রমোন্নতির প্রযত্ন করিতেছে। জন্ম হইতেই তাঁহারা কুলীন। তাঁহারা জন্মভূমির সন্তান দিব্য মনুষ্য। তাঁহারা আমার নিকট সত্য পথে আগমন করুক।
❏ অস্পৃশ্যতা বর্জন —
সহৃদ্বয়ং সাংমনস্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ।
অন্যো অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- আমি তোমাদের জন্য সহৃদয়তা, উত্তম মন, নির্বৈরতা প্রদান করিয়াছি। তোমরা একে অন্যের প্রতি গাভী যেমন নবজাত বৎসের মলিন শরীরকে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করে সেইরূপ প্রেম কর।
❏ পিতা -পুত্র —
অনুব্রত পিতুঃ পুত্রশোক মাত্রা ভবতু সংমনাঃ।
জায়াপত্যে মধমতীং বাচং বদতু শংতিবাম্।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/২|
বঙ্গানুবাদঃ- পুত্র পিতার অনুকুলে কার্য করিবে, মাতার সহিত সৎ ভাবে থাকিবে। পত্নী পতির সহিত শান্ত ও মধুর বচন বলিবে।
❏ ভ্রাতা ভাগ্নী —
মা ভ্রাতা ভ্রাতারং দ্বিক্ষম্মা স্বসারমুতস্বসা।
সম্যঞ্চঃ সব্রতা ভূত্বা বাচং বদত ভদ্রয়া।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- ভ্রাতা ভ্রাতাকে দ্বেষ করিবে না। ভাগ্নী ভগ্নীকে দ্বেষ করিবে না। তোমরা সকলে সম মতাবলম্বী ও সম কর্ম্মাবলম্বী হইয়া সৎ ভাবে বার্ত্তালাপ কর।
❏ অবিরোধ —
যেন দেবা ন বিযংতি নোচ বিদ্বিষতে মিথঃ।
তৎকৃন্মো ব্রহ্ম বো গৃহে সংজ্ঞানাং পুরুষেভ্যঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- যাহাতে জ্ঞানীদের মধ্যে বিরোধ না হয়, পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ না জন্মে সেই উত্তম জ্ঞান তোমাদের গৃহে মনুষ্যের মধ্যে দান করিয়াছি।
❏ সম্বন্ধ —
জ্যায়স্বন্তশ্চিত্তিনো মা বি যৌষ্ট সংরাধয়ন্ত সধুরাশ্চরন্ত।
অন্যো অন্যস্মৈ বল্পুবদন্ত এত সব্রীচী সাম্বঃ সংমনসস্কৃণোমি।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমরা জ্যেষ্ঠর সন্মান করিও। তোমরা বিচারশীল সাধক্ একই বন্ধনের নীচে আবদ্ধ হইয়া চলিতেছ। তোমরা পৃথক হইও না। একে অন্যের সঙ্গে মনোহর কথাবার্ত্তায় অগ্রসর হও।
❏ পানাহার —
সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজোমি।
সমঞ্চোহগ্নিং য়পর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের পান এক সঙ্গে, ভোজনও এক সঙ্গে হউক। তোমাদিগকে এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করিয়াছি। সকলে মিলিয়া পরমাত্মাকে পূজা কর। রথচক্রের কেন্দ্রের চারিদিকে যেমন অর থাকে তোমরা সেই ভাবে থাক।
❏ অতি ভোজন —
সঘ্রীচীনাম্বঃ সংমনসস্কৃণোম্যে
কশষ্টীস্তুসংবননেন সর্বান্।
দেবা ইবাহ মৃতং রক্ষমাণাঃ সায়ংপ্রাতঃ সৌমনসো বো অস্ত।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৭|
বঙ্গানুবাদঃ তোমরা সৎভাবে একই পথে অগ্রসর হও, চিত্ত তোমাদের উন্নত হউক, পানাহার তোমাদের এক সঙ্গে হউক -আমি তোমাদের জন্য এইরূপ ব্যবস্থাই করিয়াছি। অমৃত রসে আপ্লুত বিদ্বানদের ন্যায় প্রাতে ও সায়ংকালে তোমাদের চিত্ত প্রসন্ন হউক।
● ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।।
No comments
Post a Comment