পবিত্র গায়ত্রী মন্ত্র

পবিত্র গায়ত্রী মন্ত্র
পবিত্র গায়ত্রী মন্ত্র

ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো
দেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
(ঋগ্বেদ ৩/৬২/১০; যজুর্ব্বেদ ৩/৩৫, ৩০/২; সামবেদ উত্তরার্চ্চিক ৬/৩/১০)
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখ স্বরুপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগদুৎপাদক ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি।

ভাবার্থঃ পরমাত্মাই জগতের স্রষ্টা এবং জীবনের কর্মফলদাতা; তিনি জীবনের একমাত্র উপাস্যদেব; তাঁহার স্বরুপ চিন্তাই উপাসনা; তাঁহার উপাসনা করলে বুদ্ধিবৃত্তি শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালিত হয় এবং ইহাতে জীবের অভীষ্ট সিদ্ধ হয়।

গায়ত্রী বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র। পরমাত্মার ধ্যানের জন্য গায়ত্রী সিদ্ধ বৈদিক মন্ত্র। এই মন্ত্রের দ্রষ্টা ঋষি বিশ্বামিত্র এবং দেবতা সবিতা। ঋষি বিশ্বামিত্র সর্বপ্রথম এই মন্ত্রের মর্ম্ম উপলব্ধি করে প্রচার করেছিলেন। মন্ত্রের দেবতা বা বিষয় সবিতা অর্থাৎ জগৎ-স্রষ্টা ব্রম্ম। বেদারম্ভ সংস্কারে আচার্য এই মন্ত্রে ব্রম্মচারীকে দীক্ষা দান করেন। এই মন্ত্রের ছন্দের নাম গায়ত্রী। গানকারীকে ত্রাণ করে বলে এই মন্ত্রের নাম গায়ত্রী। প্রতিদিন উপাসনায় গায়ত্রী মন্ত্র জপ বা পাঠ করা আবশ্যক। গায়ত্রী মন্ত্রে দশটি শব্দ আছে।
যেমন- তৎ, সবিতুঃ, বরেণ্যম্, ভর্গঃ, দেবস্য, ধীমহি, ধিয়ঃ, যঃ, নঃ, প্রচোদয়াৎ। গায়ত্রী মন্ত্রের পূর্ব্বে প্রণব মন্ত্র "ওঁ" এবং "ভূর্ভুবঃ স্বঃ"(ভূঃ, ভুয়ঃ, স্বঃ) যোগ করে উচ্চারণ করতে হয়।

"ওঁ"  এই ওঙ্কার শব্দ পরমেশ্বরের সর্বোত্তর নাম। এতে অ, উ এবং ম্ এই তিন অক্ষর মিলে এক "ওঁ" সমুদায় হয়েছে। এই একটি নাম হতে পরমেশ্বরের অনেক নাম সূচিত হয়। "অ"কার হতে বিরাট, অগ্নি এবং বিশ্ব প্রভৃতি; "উ"কার হতে হিরণ্যগর্ভ, বায়ু, তৈজস্ব প্রভৃতি; "ম" কার হতে ঈশ্বর, আদিত্য এবং প্রাজ্ঞ প্রভৃতি নাম সূচিত হয়।
"ওঁ"  আদি নাম সার্থক। রক্ষা করেন বলে পরমেশ্বরের নাম "ওঁ"। আকাশের ন্যায় ব্যাপক বলে "খম" এবং সর্বপেক্ষা বৃহৎ বলে "ব্রম্ম" ঈশ্বরের নাম।
(ওমিত্যে) "ওঁ" যাহার নাম, যিনি কখনও বিনষ্ট হন না, তাহার উপাসনা করা উচিত, অন্যের নয়।
(ওমিত্যেত) বেদাদি শাস্ত্র সমূহে "ওঁ" পরমেশ্বরের প্রধান নাম বলা হয়েছে, অন্য সমস্ত নাম গৌণিক।
(সর্বে বেদা) সকল বেদ ও সকল ধর্মানুষ্ঠান রুপ তপশ্চর্য্যা যার বিষয় বর্ণনা করে। যাকে মান্য করে এবং যার প্রাপ্তি কামনা করে ব্রম্মচর্য্য আশ্রমকে অবলম্বন করা হয়, তার নাম "ওঁ"।

"ভূঃ" অর্থ প্রাণস্বরুপ।(যিনি সর্ব প্রাণীকে প্রাণ দান করেন, যিনি প্রাণ স্বরুপ, তিনিই ভূঃ।)
"ভুবঃ" অর্থ দুঃখনাশক।(যিনি দুঃখ বিনাশ করেন)
"স্বঃ" অর্থ সুখ স্বরুপ। (যিনি সর্বত্র ব্যাপক বা যিনি আনন্দস্বরুপ তিনিই স্বঃ।)
"তৎ" অর্থ সেই।
"সবিতুঃ" অর্থ সমগ্র জগতের উৎপাদক।
"বরেণ্যম্" অর্থ বরণ যোগ্য সর্বোত্তম।
"ভর্গোঃ" অর্থ পাপ নাশক তেজকে।
"দেবস্য" অর্থ সমগ্র ঐশ্বর্য দাতা। (পরমত্মা দাতা, জ্ঞানের উদ্দীপক এই অর্থে তিনি দেব।)
"ধীমহি" অর্থ ধারণ করি বা ধ্যান করি।
"ধিয়ঃ" অর্থ প্রজ্ঞা সমূহকে বা নির্ম্মল বুদ্ধির।
"যঃ" অর্থ যিনি
"নঃ" অর্থ আমাদের
"প্রচোদয়াৎ" অর্থ প্রেরণা দান করেন।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ

[তথ্যসূত্রঃ সত্যার্থ প্রকাশ, পৃষ্ঠা ১-৩।]

No comments

Theme images by LordRunar. Powered by Blogger.